জাপানি কবিতা - ২
"If the dream is a translation of waking life,
waking life is also a translation of the dream."
~René Magritte
ফুলের মত এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়া তাথৈ কে-
![]() |
শুরু থেকেই
আমি জানতাম দেখা হওয়াটুকু
শেষ হবে শুধু বিদায়ে, তবু
আমি এগিয়ে আসা ভোরকে উপেক্ষা করেছিলাম
আর নিজেকে তোমার কাছে দিয়েছিলাম।
মূল : FUJIWARA NO TEIKA
ইংরেজি অনুবাদ - কেনেথ রেক্সরথ
ভাষান্তর - কল্যাণী রমা
গরমকালে, নদীর ধারে,
সন্ধ্যায় চল আমরা বসি
আর নৌকার আলো দেখি
যা আটকা পড়েছে বিহ্বলতায়
এক জোনাক পোকার জালে।
ইংরেজি অনুবাদ - কেনেথ রেক্সরথ
ভাষান্তর - কল্যাণী রমা
মূল : Anonymous
আমার অপেক্ষা করবার দরকার ছিল না।
রাতের শেষ হয়ে যাওয়া
আর এই চাঁদের ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া
দেখবার থেকে
ঘুমিয়ে থাকলে আর স্বপ্ন দেখলে ভালো হত।
মূল : LADY AKAZOME EMON
বিশাল আকাশ থেকে ঝরে পরা
চাঁদের আলোর পবিত্রতা
এতই বিস্তৃত যে
তার স্পর্শে জল বরফ হয়ে যায়।
ইংরেজি অনুবাদ - কেনেথ রেক্সরথ
ভাষান্তর - কল্যাণী রমা
মূল : Anonymous
হাজার চুলের মাঝে
জট পাকিয়ে আছে কালো চুল।
জট পাকিয়েছে আমার চুল
জট পাকিয়েছে দীর্ঘ রাতভর
আমাদের প্রেমের জট পাকানো স্মৃতি।
মূল: YOSANO AKIKO
রাত্রির শুরুতে
ফিসফিস শব্দ করে
বরফ পড়ল, আর আমার মুখের
এলোমেলো চুলে তারারা এখন
এই নিচের পৃথিবী ভরে দিচ্ছে ।
মূল: YOSANO AKIKO
আমার বাদ্যযন্ত্র কোটো-র
আমার বাদ্যযন্ত্র কোটো-র
নানা সুরের মাঝে আর একটা
গভীর গোপন সুর লুকিয়ে আছে,
আমার নিজের বুকের মাঝ থেকে
উঠে আসা কান্না।
মূল :YOSANO AKIKO
ওয়াকা উপসাগরে জোয়ারের জল
যখন বালুতট ঢেকে দেয়
সারসেরা সুতীক্ষ্ন চিৎকার
করতে করতে, অন্য তীরে
নলখাগড়ার ঝোপের দিকে উড়ে যায়।
তোমার জন্য তৃষ্ণার্ত আমি
ওয়াকা উপসাগরে জোয়ারের জল
যখন বালুতট ঢেকে দেয়
সারসেরা সুতীক্ষ্ন চিৎকার
করতে করতে, অন্য তীরে
নলখাগড়ার ঝোপের দিকে উড়ে যায়।
মূল :YAMABE NO
AKAHITO
তোমার জন্য তৃষ্ণার্ত আমি
ভালোবাসি তোমাকে
অপেক্ষা করছি তোমারই জন্য,
কেবল শরতের বাতাসেই দুলে উঠেছিল
ঘরটার বাঁশের খড়খড়ি।
মূল-Princess Nukada
(7th Century)
পুড়ছে যে হৃতপিন্ড-জাপানি মহিলা কবিদের
কবিতা
অনুবাদ ও সম্পাদনা - কেনেথ রেক্সরথ, ইকুকো আতসুমি
বসন্ত শেষ হয়েছে
মনে হচ্ছে বুঝি গরমকাল এসে গেছে,
আর কেউ যেন স্বর্গী্য সুগন্ধী পাহাড়ের
ঢালে
শুকানোর জন্য ধবধবে সাদা কাপড় বিছিয়ে
দিয়েছে।
মূল-Empress Jito
(645-702)
চেরী ফুলের হঠাৎ ফুটে ওঠা-জাপানি মহিলা কবিদের কবিতা
অনুবাদ ও সম্পাদনা - কেনেথ রেক্সরথ, ইকুকো আতসুমি
সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়ে দেব বলে
নিগিতাজুর তীরে আমরা চাঁদের জন্য অপেক্ষা
করি।
চাঁদ ওঠে , জোয়ার আসে।
চল আমরা সমুদ্রের দিকে যাই।
মূলঃ Princess Nukada
(7th Century)
পুড়ছে যে হৃতপিন্ড - জাপানি মহিলা কবিদের
কবিতা
অনুবাদ ও সম্পাদনা - কেনেথ রেক্সরথ, ইকুকো আতসুমি
অনেক সময় নিয়ে দূরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকি,
চেরি ফুলের দিকে নয়,
হেমন্তের পাতার দিকে নয়,
তাকিয়ে থাকি শুধু এক ছনে ছাওয়া কুঁড়ের
দিকে,
খাঁড়ির পাশে,
হেমন্তের গোধুলিবেলায়।
মূল : Fujiwara
No Teika
শুরু থেকেই জানতাম
দেখা হওয়াটুকু
শেষ হবে শুধু বিচ্ছেদে,তবু
উপেক্ষা করলাম এগিয়ে আসা ওই
ভোরকে আর নিজেকে দিলাম তোমার কাছে।
মূলঃ FUJIWARA NO TEIKA
যখন ও বেঁচেছিল
আমরা হাতে হাত জড়িয়ে বাইরে হাঁটতে যেতাম।
আর আমাদের বাড়ির সামনে, বাঁধের উপর গজিয়ে ওঠা
এলম গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
গাছের ডালগুলো জড়াজড়ি করে থাকত।
গাছের মাথার মুকুট বসন্তের পাতায় ঘন।
ভালোবাসা আর বিশ্বাস জীবন আর মৃত্যুর চাকা
ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
মরুভূমির বুকে মরীচিকার মত সে মিলিয়ে গেল।
এক সকালে মৃত্যুর সাদা চাদরের মাঝে পাখির মত সে হারিয়ে গেল।
এখন ওর স্মৃতিতে যে বাচ্চাটাকে ও রেখে গেছে ,
সে কাঁদে আর ওকে চায়,
আমি শুধু তাকে কোলে নিতে পারি,
যেনতেন ভাবে জড়িয়ে ধরতে পারি।
ওকে দেওয়ার মত আমার কিছুই নেই।
আমাদের শোওয়ার ঘরে আমাদের বালিশগুলো
এখনও পাশাপাশি,
ঠিক যেভাবে একসময়
আমরা শুয়ে থাকতাম।
আমি ওখানে একা একা বসে থাকি
আর দিনগুলোকে অন্ধকারে ডুবে যেতে দেই ।
আমি রাত জেগে শুয়ে থাকি, ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলতে
ফেলতে।
যত শোকই করিনা কেন
আমি আর কোনদিন তাকে দেখব না ।
ঈগল পাখির পাখার নীচে তার আত্মা
হাগাই পাহাড়ে ঘুরে মরবে।
আমি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কঠিন যুদ্ধ করে
চূড়ার দিকে উঠে যাই।
সবসময়ই জানি
ওকে আর কোনদিন দেখব না,
বাতাসের হালকা কাঁপুনির মতও না।
আমার সব তৃষ্ণা, আমার সব ভালোবাসা-
কিছুতেই কিছু হবে না ।
মূলঃ HITOMARO
প্রথম ভোর আসে এক
পরিষ্কার ঝলমলে আলোর কাঁপা ঝলকানিতে
তোমার যেতেই হবে। খুব ভোরে,
বেদনায় কাঁপতে কাঁপতে
আমরা একজন আরেক জনকে পোশাক পরতে সাহায্য
করি।
মূলঃ ANONYMOUS
মেঘলা সকাল
ঝাপসা সূর্য
আমি প্রাসাদের বাগানে হেঁটে বেড়ালাম
আর সে যেখানে হেঁটে গেছে সেখানে দাঁড়িয়ে
কাঁদলাম।
মূলঃ ANONYMOUS, Manyōshū
তার
হাতের বালায় টুংটাং
পায়ের মল
বেজে ওঠে
ঝনঝন
শব্দ করে ওঠা তাঁতের পাশে সে দুলে দুলে
তাড়াহুড়া
করে কিমনোতে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য নতুন স্যাশ বের করে রাখতে যায়
সে তো
আসবে।
মূলঃ ANONYMOUS, Manyōshū
এ সময় বৃষ্টির, এ সময় তুষারের
আমি ঘুমহীন রাত কাটাই
ভোরের বেলা জমে ওঠা
নীহারকণার দিকে তাকিয়ে
যা তোমার প্রেমের মত কোমল।
মূলঃ IZUMI SHIKIBU
আমি একটা অ্যাজেলিয়া ফুল তুলে
বাড়ি নিয়ে এলাম।
এখন যখন ফুলটার দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে
থাকি,
তার টকটকে লাল রঙে
আমি আমার প্রেমিকের
পোশাকের রঙ দেখি।
মূলঃ IZUMI SHIKIBU
তোমার দিকে
স্বপ্নের পথ বেয়ে যেতে নিয়ে, আমার পা
কখনো থেমে থাকে না।কিন্তু বাস্তবের তোমার
একটা ঝলক
হবে এইসব অনেক রাতের
ভালোবাসার মূল্য।
মূলঃ ONO NO KOMACHI
এই চাঁদহীন রাতে
তুমি এস না।
ঘুম ভেঙে তোমাকে চাই ।
আমার বুকে দীর্ঘশ্বাস, আমার বুকে আলোকচ্ছটা।
আমার হৃতপিন্ড পুড়ে যাচ্ছে।
মূলঃ ONO NO KOMACHI
আমার হৃৎপিণ্ড শুন্য,
সব অনুকম্পা হয়েছে শান্ত,
তবুও কেঁপে কেঁপে উঠছি, হেমন্তের
গোধুলিতে যেভাবে একটা কাদাখোঁচা পাখি
উঠে আসে আর উড়ে যায়।
মূলঃ Saigyō
গোধুলিবেলায়
পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
চাঁদ ওঠবার জন্য অপেক্ষা কর,
তবে তোমার চলে যাওয়া দেখতে পাব।
মূলঃ OYAKEME, A GIRL OF BUZEN
আলো ফোটার সময়
সাদা তুষার ঝরে পড়ে
ইওশিনোর গ্রামটার উপর
ভোরবেলার চাঁদের
আলোর মত।
মূলঃ SAKANOE NO KORENORI
পাহাড়ের গ্রামটায়
বসন্তের গোধুলিবেলা ঘনিয়ে আসে।
আমি এগিয়ে যেতেই
সন্ধ্যায় মন্দিরের ঘন্টার
গমগম শব্দে
চেরিফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ে।
মূলঃ THE MONK NO̅IN
বসন্তের গভীর, সংকীর্ণ গিরিখাতে
স্বচ্ছ বৃষ্টিতে
পাপিয়া গান শুরু করে
পাহাড়ের স্তব্ধতায়।
মূলঃ ONOE NO SHIBAFUNE
ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে যাওয়া
নারুমি সৈকতে, কেঁদে কেঁদে ফেরা টিট্টিভ পাখি
কাছাকাছি ঘন হয়ে আসে, পাখায় পাখা ঘষে,
যখন চাঁদ ঢলে পড়ে
উঁচু হয়ে হয়ে ওঠা ঢেউ-এর পিছনে।
মূলঃ FUJIWARA NO SUEYOSHI
কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ
বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার
হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে। ২০১৫ সালে ‘যুক্ত’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কল্যাণী রমার প্রথম
বই ‘আমার ঘরোয়া গল্প’। ২০১৬ সালে ‘চৈতন্য’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে দু’টো অনুবাদের বই।
ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার ‘হাতের পাতায় গল্পগুলো’ আর সিলভিয়া প্লাথ, অ্যান সেক্সটন, মেরি অলিভারের কবিতা নিয়ে ‘রাত, বৃষ্টি,
বুনোহাঁস’। ২০১৭ সালে ‘যুক্ত’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কল্যানী রমা’র কাব্যগ্রন্থ ‘জলরঙ’,
২০১৮ সালে হেনরিক ইবসেন-এর নাটকের অনুবাদ
‘মরণ হ’তে জাগি’। ২০১৮ সালে যুক্ত থেকে প্রকাশিত হয়েছে কল্যাণী রমার আর একটি বই। ‘দমবন্ধ’।
২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে 'রেশমগুটি'।
Comments
Post a Comment